‘কোনো ছবি যদি সিনেপ্লেক্সের দর্শক না দেখে, সেটা আমাদের দোষ নয়’

প্রকাশিত: ৬:০৫ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৪

বিনোদন ডেস্ক রিপোর্টঃ 

২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম ও বৃহত্তম মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্স। সে হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির দুই দশকের পথ চলা। বর্তমানে তাদের সাতটি শাখা রয়েছে। চলতি বছরই চালুর অপেক্ষায় আরও আরও তিনটি শাখা। সবমিলিয়ে ১০০টি স্ক্রিনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

তবে এই দুই যুগের পথচলা খুব একটা মসৃণ ছিল না। ছিল নানা প্রতিবন্ধকতা। গত ক’দিন ধরেই সামাজিকমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্টার সিনেপ্লেক্স। মূলত রোজার ঈদের চতুর্থ সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ‘শ্যামা কাব্য’ ও ‘ডেডবডি’ তিনদিনের মাথায় নামিয়ে নেওয়ার পরই তাঁদের নিয়ে শোরগোল। সিনেপ্লেক্সের নামে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলেছেন এই দুই ছবির পরিচালক-প্রযোজকরা। দেশীয় সিনেমা নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের উদাসীনতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ এনে প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলনও করেছে।

এসব অভিযোগের বিপরীতে সম্প্রতি স্টার সিনেপ্লক্সের কর্ণধার ও চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব রহমান রুহেল জবাব দিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “যে অপবাদ দেয়া হচ্ছে, এতে সিনেপ্লেক্সের সবাই কষ্ট পেয়েছে। এখানে আমার বা সিনেপ্লেক্সের কোনও হাত নেই। আমি কোনও ব্যক্তি বা ছবির বিপক্ষে নই। ব্যবসা হলে প্রফিট সিনেপ্লেক্সেরও হবে। কিন্তু কোনও ছবি যদি সিনেপ্লেক্সের দর্শক না দেখে, সেটা আমাদের দোষ নয়। এটা ছবি সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা। তারা ঠিকমত প্রমোশন করেনি, ভালোমত ছবিটি বানাতে পারেনি। প্রেস কনফারেন্স করে বলা হচ্ছে ‘সিনেপ্লেক্সকে কন্ট্রোল’ করতে হবে। আপনারা কিসের কন্ট্রোল করবেন? বিনিয়োগ করে রিস্ক নিচ্ছি আমি, আপনারা কেন কন্ট্রোল করবেন? এখানে গডফাদার আনতে চাচ্ছে কিনা জানি না।”

সিনেপ্লেক্সের দর্শকের চাহিদার কথা জানিয়ে রুহেল বলেছেন, “সিনেপ্লেক্সে যারা ছবি দেখে তারা এসব ছবি দেখতে চায় না। আমাদের সার্ভে অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের দিকে জন্ম যাদের, তারাই বেশি ছবি দেখতে আসে। তারা ভালো গল্পের আধুনিক ছবি চায়। কিন্তু এসব না করে যা ইচ্ছে ও মানহীন ছবি দিয়ে জোর করে বলা হয় সিনেপ্লেক্সে দেখাতে হবে, এটা তো হবে না। ‘ডেডবডি’ চালানোর জন্য উনি (ইকবাল) আমাকে বারবার বলেছেন। ভেবেছি, এতবার যেহেতু বলছে দিয়ে দেখি কি হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ ছবি দর্শক দেখেই নাই, বরং নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। আমাদের দর্শকরা বলেছে, সিনেপ্লেক্সে এই টাইপের ছবি দেখতে চাই না। শিক্ষিত, আপারক্লাস এবং মধ্যবিত্তরা আমাদের নিয়মিত দর্শক। তারাই আমাদের কাছে কিং। এমন কোনও ছবি আমরা দেখাবো না যে, আমাদের ব্র্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

অন্যদিকে ‘শ্যামা কাব্য’ টিমের অভিযোগ প্রসঙ্গে রুহেলের ব্যাখ্যা এরকম, “বসুন্ধরা সিটিতে আমাদের পাঁচটি স্ক্রিন রয়েছে। রিসেন্ট ভাড়া বাড়াড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে যে স্ক্রিনে সমস্যা আছে, সেটা ঠিক করা সম্ভব হয়নি। অপেক্ষা করছি, নতুন চুক্তি হওয়ার পর স্ক্রিনসহ বাকি যা আছে সেগুলো সংস্কার করবো। উনি (বদরুল আনাম সৌদ) ঠিক বলেছেন। ওই হলে আমাদের প্রজেকশনে একটু সমস্যা ছিল। ওনার ছবিটি যেহেতু ডার্ক, উনি স্ক্রিন চেইঞ্জ করতে আমাকে পার্সোনালি বলতে পারতেন। আমি রিপ্লেস করে দিতে পারতাম। কিন্তু তারা সিনেপ্লেক্সের লবিতে দাঁড়িয়ে আমাদের অপবাদ দিয়েছে, যা কাম্য নয়। তবে আমি পরিসংখ্যান দেখলাম তার ছবি দেখতে দর্শক কম এসেছিল। ছবি ভালো-মন্দ তা বলবো না, তবে দর্শক সেভাবে ছিল না। ভালো সিনেমা বলতে দর্শক ঈদের পর এখনো সিনেপ্লেক্সে ‘রাজকুমার’ চলছে এবং দর্শক পছন্দ করায় আমরা চালাচ্ছি। দর্শক কম থাকায় নামিয়ে দেয়ার পর আবার দর্শকরা চাচ্ছে বলে ‘কাজলরেখা’ দেখাচ্ছি। আমি সাপ্লাই ডিম্যান্ডে বিশ্বাস করি। দর্শক যেটা চাইবে আমি সেটা দেখাবো।”

সিনে বাণিজ্যের অভিজ্ঞ এই ব্যক্তি জানান, তারা বরাবরই দর্শক চাহিদাসম্পন্ন ভালো সিনেমার পক্ষে। ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ‘সুড়ঙ্গ’ কিংবা ‘প্রিয়তমা’র মতো ছবি এলে তারা নিজ থেকেই শো বাড়িয়ে দেন।

এদিকে আরও একটি অভিযোগ ওঠে সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে। তা হলো, তাদের বিক্রিত টিকিট মূল্য থেকে খুব অল্প অংশই প্রযোজক পায়। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার জানান, বর্তমানে টিকিটের ২০ শতাংশ প্রযোজকরা পান। বিভিন্ন ট্যাক্স সমন্বয় করে ভবিষ্যতে এই অংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।