কুড়িগ্রামের আইনজীবীর ছেলেসহ দুই শিক্ষার্থী ঢাকায় অপহরণ

অপহৃত দুই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি

প্রকাশিত: ১:০৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২০

কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলামের ছেলেসহ দুই শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাদেরকে অপহরণ করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। পরে তাদের অভিভাবকের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

অপহৃত দুই শিক্ষার্থী দিবস ও ধ্রুবকে উদ্ধার করা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক সূত্র দাবি করেছে শুক্রবার তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। তবে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের অভিভাবকরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলছেন না।

অপহৃতদের পারিবারিক সূত্র জানায়, ধানমন্ডির ভি এইচ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী তানজীব আল দিবস ও ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান ধ্রুব গত ২১ জানুয়ারি দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে তাজমহল রোডের মিনার মসজিদ এলাকা থেকে অপহৃত হন। তারা দুজন সম্পর্কে মামা ভাগ্নে। একদল অপহরণকারী অস্ত্রের মুখে তাদেরকে অপহরণ করে একটি প্রাইভেটকারযোগে ঘটনাস্থল থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের হাত-পা-মুখ বেঁধে গাড়ির ভেতর ফেলে রাখে। এ সময় গাড়িতে উচ্চস্বরে গান বাজানো হয়।

এ ঘটনা নিয়ে কুড়িগ্রামে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা জানতে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন পেশার মানুষ খোঁজ নিতে শুরু করে। একই সঙ্গে ঢাকায় পড়াশোনারত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিবসের অপহরণের ঘটনা জানার পর থেকে তার মা বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন।

কুড়িগ্রামের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকট আমজাদ হোসেন ও অ্যাডভোকেট শামসুল হক সরকার জানান, অপহরণের ঘটনা শোনার পর থেকে ঢাকায় পড়া তাদের নিজ নিজ সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানায় একটি জিডি করেন অপহৃতদের অভিভাবকরা (জিডি নং-১১৭৮-তারিখ ২১-০১-২০২০)। পরে শুক্রবার মহাম্মদপুর থানায় একটি মামলায় (মামলা নম্বর-৮০-তারিখ ২৪-০১-২০২০) অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের অপহরণে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।

দিবসের পারিবারিক সূত্র জানায়, অপহরণের পর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে অপরহরণকারীরা। কয়েকটি টেলিটক নম্বরে দিবসের বাবা অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলামের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এছাড়া ‘থানা পুলিশ করলে কিংবা পত্রিকায় প্রকাশ করলে মেরে ফেলা হবে’ মর্মে হুমকিও দেয়া হয় কয়েক দফায়। এ কারণে পুরো পরিবার এখনও আতঙ্কগ্রস্ত। তাই দিবসের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে তার পরিবার পরিষ্কার কোনো ধারণা না দিলেও একাধিক সূত্র জানায়, শুক্রবার গভীর রাতে অপহৃতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবশ্য পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

কুড়িগ্রাম জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহীন জানান, রংপুর মিঠাপুকুর এলাকার তার মক্কেল জনৈক দুলু মোবাইলে জানান, ফকরুল স্যারের পূত্র দিবসকে অপহরণ করেছে মশিউর রহমান পাপ্পুর গ্রুপ। পাপ্পু অপহরণ, প্রতারণাসহ নানা অপকর্মের গড ফাদার। তার নামে কয়েকটি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম আদালতে প্রতারণার অভিযোগে দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তার বাবার নাম মতিউর রহমান মন্ডল। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটায়। আর ঢাকায় ১/৪ ব্লক-এ, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুরে। কথিত দুলু আরও দাবি করেন পাপ্পুর লোকজন ঢাকায় তাকেও অপহরণ করে। ৩৩ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর গত ২০ জানুয়ারি কৌশলে পালিয়ে আসেন। জিম্মি থাকা অবস্থায় পাপ্পুসহ অন্যদের আলোচনা করতে শুনেন পরবর্তী টার্গেট অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলামের পূত্র দিবস।

কুড়িগ্রাম জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সেতু জানান, মশিউর রহমান পাপ্পু ডাকাতি, প্রতারণাসহ ৪টি মামলায় কুড়িগ্রামে জেলহাজতে ছিলেন। সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলাম তাকে জামিন করান। এখনও কুড়িগ্রাম আদালতে জিআর-৩১০/১৮, সিআর-২১২/১৯, সিআর-২০৫/১৯ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় মশিউরসহ তার বাবা পলাতক আসামি।

ঢাকায় কর্মরত আইনজীবী অ্যাডভোকেট তানজীমুল ইসলাম প্যারিস জানান, দিবস অপহ্নত হওয়ার দিন সকাল ১০টার দিকে কুড়িগ্রামের উলিপুর এলাকার জনৈক নিশান ফোন করে জানান, দিবস যেন আজ বাড়ি থেকে বের না হয়। এরপর থেকে নিশানেরও ফোন বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট ফকরুল ইসলাম জানান, এখনও অপহৃতদের উদ্ধার করার কোনো খবর তারা পাননি। তিনি জানান, মামলা হয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্ত করছে।

এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোবাইলে অপহরণ মামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন দিবস ও দ্রুবকে পুলিশ উদ্ধারের সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।