করোনা: শাহজালালে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে পার্সোনাল প্রটেকশনে ঘাটতি

প্রকাশিত: ৭:০৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০২০

বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা সেই পরীক্ষা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মীরা। যাত্রীদের কাছ থেকে সংক্রমণের সুরক্ষায় পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) হিসেবে হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক, অ্যাপ্রোন পরে সেখানে কাজ করছেন তারা। এরপর যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টম জোন পার হয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে হয়। সরাসরি যাত্রীদের সংস্পর্শে এলেও ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে কর্মরতদের নেই পর্যাপ্ত পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই)।

বিদেশ থেকে আসা সব যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যবহার হচ্ছে থার্মাল স্ক্যানার। এছাড়াও স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যবহার করছেন হ্যান্ডহেল্ড ইনফারেড থার্মাল স্ক্যানার। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে হেলথ কার্ড সংগ্রহ ও হটলাইন নম্বর সরবরাহ করছেন তারা। সরাসরি যাত্রীদের কাছাকাছি আসায় ঝুঁকি এড়াতে পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ব্যবহার করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক পরে সেখানে কাজ করছেন তারা।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। ২০১৮ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক যাত্রী ছিল ৭০ লাখ ৭৪ হাজার ৯২৪ জন। ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ লাখ ১৬ হাজার ১২৫ জন।

বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরই ইমিগ্রেশনে আসেন যাত্রীরা। সেখানে যাত্রীদের পাসপোর্ট হাতে নিয়ে কাজ করতে হয় ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যদের। একইসঙ্গে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতেও হয় তাদের। তবে সেখানে যাত্রীদের কাছাকাছি এলেও পর্যাপ্ত পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) নেই ইমিগ্রেশন কর্মীদের। অনেকের মুখে নেই মাস্ক, আবার কারও হাতে নেই গ্লাভস। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যদের সীমিত সংখ্যক মাস্ক দেওয়া হয়। এরপর দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সীমিত আকারে মাস্ক ও গ্লাভস দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত মাস্ক না থাকায় একই মাস্ক কয়েকদিন ব্যবহার করছেন ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যরা। একইসঙ্গে রয়েছে গ্লাভস সংকট।

এভাবে ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে কাজ করছেন ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্য বলেন, কোনও যাত্রী আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত করে বলা অসম্ভব। যাত্রীরা আমাদের খুব কাছাকাছি আসেন, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। যাত্রীদের হাত থেকে পাসপোর্ট নিতে হয়। অথচ আমাদের সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।

প্রায় একই পরিস্থিতি কাস্টমস জোনে। যাত্রীরা ইমিগ্রেশন শেষ করে লাগেজ সংগ্রহ করেন বেল্ট থেকে। সেখান থেকে কাস্টমস জোন পার হয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হন তারা। কাস্টম জোনে যাত্রীদের লাগেজ তল্লাশি করা হয়। কোনও কোনও যাত্রীর দেহ তল্লাশি করা হয়। তবে বেশিরভাগ কাস্টমসকর্মী মুখে মাস্ক ব্যবহার করেন না। কারও আবার মুখে মাস্ক থাকলেও সেটি রয়েছে নাকের নিচে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন, পাসপোর্ট হাতে নিচ্ছেন কাস্টমকর্মীরা কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই।

এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের নিয়ে আমাদের একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। সবাইকে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এড়াতে পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা বিমানবন্দরে কাজ করেন তাদের আমরা অফিসিয়ালি মাস্ক, গ্লাভস সরবরাহ করেছি। তাদের সুরক্ষার জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কেউ কেউ মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করছেন না জানালে কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য সবার এগুলো ব্যবহার করা জরুরি। এরপর সবাই যেন ব্যবহার করেন সেটি নিশ্চিত করতে আমরা নজরদারি বাড়াবো, সবাইকে সতর্ক করবো। সূত্র-বাংলাট্রিবিউন।