কমিটিতে নাম প্রস্তাব না করায় প্রধান শিক্ষককে হত্যার হুমকির অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওই বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মো. আলতাফ হোসেনকে মোবাইলে ফোন দিয়ে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে।
জাহাঙ্গীর হোসেন বিএনপি দলীয় পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তিনি পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি। এ ঘটনায় শিক্ষক আলতাফ হোসেন জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাউফল থানায় সোমবার বিকেলে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এদিকে ওই শিক্ষক ও আইনজীবীর মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে ।
এদিকে মোবাইল ফোন কল রেকর্ডের সত্যতা স্বীকার করেছেন শিক্ষক আলতাফ হোসেন এবং অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর হোসেন।
এ বিষয়ে ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) আলতাফ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে তিন জনের তালিকা পাঠিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। কমিটির সভাপতি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন। তবে তার (জাহাঙ্গীর) নাম প্রস্তাব করা হয়নি, তার নাম না দেওয়ার ঘটনায় তিনি তাকে (আলতাফ) দায়ী করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি (জাহাঙ্গীর) তাকে হত্যার হুমকি দেয় এবং অশালীন ভাষায় গালমন্দ করেন। বিষয়টি তিনি (আলতাফ) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছেন এবং থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আমার সাথে জাহাঙ্গীরের কোনো বিরোধ নেই, তার অপরাধ প্রধান শিক্ষকের পাঠানো তালিকা নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন।
এদিকে ভাইরাল কল রেকর্ড প্রসঙ্গে আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘অডিও ভাইরাল হওয়া ভালো, এতে অসুবিধা নেই। সে গালমন্দ পায় দেখে তাকে গালাগাল করেছি। সে (আলতাফ) আমার ছোট ভাইর থেকে বিমা করার জন্য তিন লাখ টাকা নিছে। সেটা ফেরত দেয় না, তাই গালমন্দ করেছি। তারে (আলতাফ) মাইরে মাফ নাই। টাকা ফেরত দিবে, নইলে মাইর খাইবে সোজা কথা।’
সভাপতি নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সভাপতি সংক্রান্ত বিষয় নাই। এজন্য গালাগাল করে কি হবে! এখন না হই, ছয় মাস পরে সভাপতি হবো। তারা (স্কুল শিক্ষকবৃন্দ) সভাপতি হিসেবে তিনজনের নাম দিছে, তার নাম দেয় নাই। এখন এটাতো আর শেষ নয়, সামনে দল (বিএনপি) ক্ষমতায় আসলে ডিসির অনুমতিও লাগবে না। ছয় মাস ধৈর্য ধরতে তার অসুবিধা নেই। এজন্য গালমন্দ করেতো লাভ নাই, মূলত ছোট ভাইর পাওনা টাকার জন্য তার সাথে ওই কথোপকথন হয়েছে। তারে (আলতাফ) একটা জিডি কইরা মামলা করতে বলেন। খুনের হুমকির ধারায় মামলা করতে পারবে, তাতে জাহাঙ্গীর উকিলের কিছু হয় না।’
এ বিষয়ে ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জাহাঙ্গীর তাকেও গালমন্দ করেছে এবং হুমকি দিয়েছিলেন। এখানে আসলে তাদের কিছু করার নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মহোদয় যাচাই-বাছাই করে সভাপতি নির্বাচিত করবেন।’
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হবে। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।