ইবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নাম বিভ্রাট, এক পদে দুই দাবিদার

প্রকাশিত: ৪:২৮ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২৪

আফরিন আক্তারঃ

বলা হয়ে থাকে, যার নেই কোনো গতি সে হয় সহসভাপতি! কিন্তু এই গতিহীন পদটিই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত ১৯৯ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির ৬৬ নং সহসভাপতি পদ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এ পদটিতে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ নামে একজনকে পদায়ন করা হলেও ‘আমিই সহসভাপতি’ বলে দাবি করেছেন দুজন।

এরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের কর্মী এবং বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। অন্যজন হলেন, শাখা ছাত্রলীগের ১ নং সহসভাপতি তন্ময় সাহা টনির অনুসারী ও রুমমেট এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম।কমিটি ঘোষণার পরে দুজনেই নিজেদের ফেসবুক আইডিতে ‘সহসভাপতি’ হিসেবে নিজেদের পরিচিতি লিখেছেন। পাশাপাশি দুজনকেই তাদের অনুসারীরা ‘সহসভাপতি পদ পাওয়ায়’ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানিয়ে পোস্ট করেছেন। কেউ দিয়েছেন ফুলও।

এদিকে, গত শুক্রবার (১০ মে) রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত ইবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘেঁটে দেখা যায়, এতে ৭১ জনকে সহসভাপতি পদে মনোনীত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৬৬ নং সহসভাপতি পদটিতে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ নামে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকায় পদধারীর সঙ্গে বিভাগের নাম উল্লেখ না থাকায় চিঠি ইস্যু না হওয়া পর্যন্ত আপাতত এই বিতর্ক থামছে না।

এ বিষয়ে বায়োটেকনোলজি বিভাগের সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, আমিই প্রকৃত সহসভাপতি। আমিই সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। সাধারণ সম্পাদক জয় ভাই আমাকে আমার পদের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। অন্য যে জন পদ দাবি করছে তার নামের সাথে পদে দেয়া নামের মিল নাই। পূর্বের হল কমিটির পদে আমার নাম, ফোন নাম্বার দেওয়া আছে। সক্রিয় কর্মী হিসেবে সবাই আমাকে চিনে এবং জানে। অন্য একজন কেন পদ দাবি করছে বুঝতেছি না।

সিএসই বিভাগের সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি শাখা ছাত্রলীগের ১ নং সহ-সভাপতি তন্ময় সাহা টনি ভাইয়ের কর্মী। উনি আমাকে আমার পদের ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন। আমি সহসভাপতি, আরেকজন যিনি পদ দাবি করছেন আমার জানামতে তার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ২০২১ সালে।

এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের ১ নং সহ-সভাপতি তন্ময় সাহা টনি বলেন, শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ আমাদের কারো সাথে আলোচনা বা সমন্বয় না করেই নিজেদের পছন্দমত কমিটি জমা দিয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে আমরাও আমাদের যারা কর্মী আছেন তাদের মূল্যায়ন করার স্বার্থে কয়েকজনের নাম কেন্দ্রে জমা দেই। আমি যে সিরাজুলের নাম দিয়েছি, বিভ্রান্তি দূর করার জন্য ওর নামের পাশে ব্র্যাকেটে নিকনেম হিসেবে সিরাজ দিয়েছিলাম। কিন্তু এই নিকনেম টাও যে আরেকজনের সাথে মিলে যাবে তা আমি বুঝতে পারি নাই। যেহেতু কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কমিটির অনুমোদন দিয়েছে, এই বিভ্রান্তি তারাই দূর করতে পারবে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, সভাপতি সেক্রেটারির বাইরে যেয়ে কেন্দ্রে কারো নাম প্রস্তাব করার কোন সুযোগ নেই। যার সাথে যার সম্পর্ক ভালো তার কাছে হয়তো সুপারিশ বা অনুরোধ করতে পারে কিন্তু নাম প্রস্তাব করার এখতিয়ার আমাদের ই।

আমরা সহ-সভাপতি পদে যাকে রেখেছি সে বায়োটেকনোলজি বিভাগের সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। সে লালন শাহ হলের বাসিন্দা। সে ক্যাম্পাসে আছে, পড়াশোনা করছে। সবাই তো সব সময় ক্যাম্পাসে থাকে না, পারিবারিক কারণে বাসায়ও যায়। এখানে কনফিউশান তৈরি হলেও আমি বিষয়টি ক্লিয়ার করে দিয়েছি। খুব দ্রুতই পদধারীদের নিয়ে সাধারণ সভা করবো। তখন এ নিয়ে কোনো প্রকার কনফিউশান থাকবে না।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, সহসভাপতি পদটি মূলত বায়োটেকনোলজি বিভাগের সিনিয়র যে সিরাজ আছে ওর। এটা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুপারিশ করেছে। নামের পাশে বিভাগ বা সেশন উল্লেখ না থাকায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের জন্য চিঠি পাঠাবো। এছাড়াও আসন্ন অনুষদ ও হল কমিটিতে প্রয়োজনবোধে আমরা নামের পাশে বিভাগ, সেশন উল্লেখ রাখবো।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ বলেন, ইবি ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীকে তো আমরা চিনি না। ওই পদের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভালো বলতে পারবে।

শাখা ছাত্রলীগের ১নং সহ-সভাপতি তন্ময় সাহা টনির বক্তব্যের সূত্র ধরে কমিটিতে নাম প্রস্তাবনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কেউ ই প্রস্তাবনা দিতে পারেন যে এই নামে একটি ছেলে আছে, সে ভালো কি মন্দ, তাকে কমিটিতে রাখা যায় কিনা। নাম প্রস্তাব দেওয়া আর কমিটিতে রাখা তো এক কথা নয়। যেখানে সভাপতি, সেক্রেটারি আছে সেখানে ১ নং সহ-সভাপতি কে? বলে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, কেন্দ্রে তিনি (তন্ময় সাহা) কার সঙ্গে কথা বলেছেন তার নাম জিজ্ঞেস করেন আমাদের সাথে তার কোনো কথা হয় নাই