আসামিকে না পেয়ে স্ত্রীর দিকে পিস্তল তাক, তদন্তের নির্দেশ

প্রকাশিত: ৫:২৭ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৪

মোঃ সাইফুল ইসলামঃ 

সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামিকে না পেয়ে তার স্ত্রীর দিকে ডিবি কর্মকর্তার পিস্তল তাক করার অভিযোগের বিষয়ে স্বপ্রণোদিত সুয়োমোটো গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এমন গুরুতর অভিযোগে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায়, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) মাধ্যমে তদন্ত করে আগামী ১৩ জুনের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নির্দেশ দেন কমিশন।

বুধবার (১৫ মে) কমিশনের উপ-পরিচালক এম. রবিউল ইসলামের সই করা সুয়োমোটোতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ মে ‘আসামি না পেয়ে স্ত্রীর মাথায় পিস্তল ঠেকালেন ডিবি কর্মকর্তা, তদন্তে কমিটি’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে।প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয় যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামি না পেয়ে বাড়ির নারী ও শিশুদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যের বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে ডিবির এক কর্মকর্তা আসামির স্ত্রীর দিকে পিস্তল তাক করেন।

ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এক থেকে দেড় মাস আগে সদর উপজেলার বিশ্বরোড এলাকার আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে সোনা আত্মসাতের অভিযোগে নূরুল আলমের নামে থানায় একটি মামলা করেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নূরুল আলম সৌদি আরব থেকে আবদুল কুদ্দুসের এক আত্মীয়ের সাড়ে ৮০০ গ্রামে সোনা আনেন। তবে পুরো স্বর্ণ বুঝিয়ে না দিয়ে কুদ্দুসকে মাত্র ৪০০ গ্রাম সোনা দেন। বাদীপক্ষ সদর থানার পরিবর্তে পুলিশের অন্য শাখা দিয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দেন।

গত ১০ মে ৪টার দিকে নূরুল আলমের থলিয়ারার বাড়িতে সাদা পোশাকে আসেন ডিবি পুলিশের সদস্যরা। তখন বাড়ির নারীসহ অন্যদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। ডিবি পুলিশের এসআই রেজাউল করিম একপর্যায়ে নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যা বেগমের দিকে পিস্তল তাক করেন।পরে আসামিকে না পেয়ে তারা সেখান থেকে চলে যান। ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন নূরুল আলমের ভাই সারোয়ার আলম।

তিনি বলেন, শুক্রবার বিকেলে বাড়িতে অনুষ্ঠান চলছিল। সে সময় আমার ভাই বাড়িতে ছিলেন না। বিকেল ৪টার দিকে ৩/৪ জন লোক বাসায় ঢোকেন। তারা আমার ভাই নূরুল আলমের খোঁজ নেন।

তিনি আরও বলেন, ভাইকে না পেয়ে তার স্ত্রী বন্যা বেগম (৩৩), আমার অন্তঃসত্ত্বা বোন তাসলিমা বেগমসহ (৩২) কয়েকজনকে মারধর করেন। আমার ভাইয়ের ৯ বছরের শিশুসন্তানকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। এসব দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করায় আমার এক ভাতিজিকেও তারা মারধর করেন। তার মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের বাঁচাতে গেলে পুলিশ সদস্যরা আমাকে ও ভাবিকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়েন।

সারোয়ার আলম অভিযোগ করেন, পুলিশ তল্লাশি করে আমাদের ঘরের মালামাল, স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। মুঠোফোনের ভিডিও তারা ডিলিট (মুছে দেওয়া) করে দেয়। পুলিশ পিস্তল তাক করার পাশাপাশি গুলিও করেছে। গুলির খোসা আমাদের কাছে আছে। তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।

মানবাধিকার কমিশনের সুয়োমোটোতে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিকে না পেয়ে আসামির স্ত্রীর দিকে পিস্তল তাক, মারধর, ৯ বছরের শিশু সন্তানকে চুলে ধরে টানা-হেঁচড়া, বন্দুক দিয়ে মাথায় আঘাত এবং দুটি গুলি ছোড়ার অভিযোগ অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায়, পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে তদন্ত করে আগামী ১৩ জুনের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বলা হয়েছে।