‘আত্তির জ্বালায় আধাপাকা ধানই কাটতাছি’

প্রকাশিত: ৩:৩৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২৪

শেরপুর প্রতিনিধি:

‘বেডাইনের (স্বামী) রাইখা (রেখে) যাওয়া ১০ কাঠা জমিতে আবাদ কইরাই সংসার চালাই। কিন্তু আত্তির (হাতি) জ্বালায় তো ধান না পাকতেই কাইটা আনা লাগতাছে। না কাটলে কষ্টের ধান আত্তির পেটে চলে যাইবে। তাই বাধ্য হইয়াই নিজেই আধাপাকা ধানই কাটতাছি।’

কথাগুলো বলছিলেন কিষানি নূরেদা বেগম। তাঁর মতো

‘বেডাইনের (স্বামী) রাইখা (রেখে) যাওয়া ১০ কাঠা জমিতে আবাদ কইরাই সংসার চালাই। কিন্তু আত্তির (হাতি) জ্বালায় তো ধান না পাকতেই কাইটা আনা লাগতাছে। না কাটলে কষ্টের ধান আত্তির পেটে চলে যাইবে। তাই বাধ্য হইয়াই নিজেই আধাপাকা ধানই কাটতাছি।’

কথাগুলো বলছিলেন কিষানি নূরেদা বেগম। তাঁর মতো শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বুরুঙ্গা কালাপানি বাতিকুচি সীমান্তবর্তী এলাকার অনেক কৃষক আধাপাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার সরেজমিন বুরুঙ্গা কালাপানি বাতিকুচি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দেড় থেকে দুই সপ্তাহ সময় পেলে মেহনতের ফসল মোটামুটি গুছিয়ে ঘরে তুলতে পারতেন কৃষক। কিন্তু বন্যহাতির আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ফসল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।

নূরেদা বেগম জানান, অনেক দিন হলো স্বামী মারা গেছে। অভাবের সংসারে বাধ্য হয়ে দুই ছেলেকে ঢাকায় কাজে পাঠিয়েছেন। অল্প একটু আবাদি জমিই শেষ সম্বল। তাও হাতির কারণে কোনো বছরই ঠিকমতো আবাদ ঘরে তুলতে পারেন না। তার এলাকার মানুষ ফসল নিয়ে বিপদে আছেন বলে জানান তিনি।
বছরের পর বছর বন্যহাতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই ধান চাষ করতে হচ্ছে নালিতাবাড়ী সীমান্তের মানুষের। এখন হাতির উপদ্রব শুরু হওয়ায় তাদের আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। তাই পাকা ধান ঘরে তুলতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হাতির দলকে প্রতিরোধ করতে তারা ফসল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে হাতি প্রতিরোধে ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের’ সদস্যরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

স্থানীয়রা জানান, দিনে হাতির পাল পাহাড়ে থাকে। বিকেল হলে নেমে আসে লোকালয়ে। প্রতিবছর ধান পাকার সময় হলেই বন্যহাতির পাল হামলে পড়ে লোকালয়ের আধাপাকা ধানক্ষেতে। ফসল বাঁচাতে দিনরাত পটকা ফাটিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শব্দ করে পাহারা দিতে হয়। তবে অধিকাংশ কৃষক হাতির ভয়ে আধাপাকা ধান কেটেই ঘরে তুলছেন। কৃষকের দাবি, পরিমাণে কম পেলেও বড় ধরনের ক্ষতি হবে না তাদের। বেশি পাকার জন্য অপেক্ষা করলে এই ফসল হবে হাতির খাবার।

বাতকুচি গ্রামের কৃষক দুদু মিয়া বলেন, ‘অল্প একটু জমিতে আবাদ করেছি। ফলনও ভালো অইছে, কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে হাতি অত্যাচার করছে। আজ (মঙ্গলবার) হাতির পাল পায়ে পিষ্ট করে সব ধান নষ্ট করেছে। এলাকার সবাইকে রাত-দিন ক্ষেত পাহারা দিতে হচ্ছে। সব সময় আমরা আতঙ্কের মধ্যে থাকি।’

বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, বন্যহাতি প্রতিরোধে কৃষকের সঙ্গে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা কাজ করছেন। এ ছাড়া হাতি যেসব কৃষকের ফসল নষ্ট করেছে, তাদের বন বিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছে।